মুচলেকা দিয়ে এক বছর সময় পেল বিজিএমইএ

প্রকাশিত: ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৮

একুশ ডেস্ক : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙতে কর্তৃপক্ষ মুচলেকা দেওয়ায় শেষবারের মতো আরো এক বছর সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

আজ সোমবার সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে বিজিএমইএর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত বুধবার শেষবারের মতো এক বছরের সময় চেয়ে লিখিত সংশোধিত মুচলেকা দেয় বিজিএমইএর বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। মুচলেকায় ভুল থাকায় বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারারস এ্যান্ড এক্সপোর্টিং এ্যাসোসিয়েশন) ভবন ভাঙতে সময় বাড়ানোর বিষয়ে সোমবার আদেশ দেয়ার কথা জানায় আপিল বিভাগ।

তারও আগে, রাজধানীর হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙতে আরো ৭ মাস সময় দিয়েছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু আপিল বিভাগের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে ভবন ভাঙ্গতে না পেরে আবারও সময় আবেদন করে বিজিএমইএ। সে সময় মুচলেকা দিলে বিজিএমইএ এর সময় আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছিল আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার বিষয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা আদালতকে জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বিভাগ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী।

বিজিএমইএ বহুতল ভবন ভাঙ্গতে ৩ বছরের সময় চেয়ে গত ৮ মার্চ আবেদন করা হয়। সে প্রেক্ষিতে গত ১২ মার্চ ৬ মাস সময় দিয়েছিল আদালত। এর আগে গত ৫ মার্চ বিজিএমইএ বহুতল ভবন ভাঙ্গার আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আনা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। গত ৫ মার্চ বহুতল ভবনটি ভাঙতে আরো এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত বছরের ৮ এপ্রিল বিজিএমইএর বহুতল ভবনটি ভাঙতে সাত মাস সময় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আদেশে আদালত বলেছিলেন, ‘এটাই শেষ সুযোগ। আর সময় দেওয়া হবে না।’

গত বছরের ৫ মার্চ আপিল বিভাগ বিজিএমইএ ভবন অবিলম্বে ভেঙে ফেলতে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে (রিভিউ) করা আবেদন খারিজ করে দেন। তখন ভবন ভাঙতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আবেদন করতে বলেন। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ ভবন সরাতে তিন বছর সময় চেয়ে আবেদন করে। ১২ মার্চ আপিল বিভাগ আবেদন নিষ্পত্তি করে ছয় মাস সময় দেন ভবন সরাতে।

২০১৬ সালের ২ জুন বিজিএমইএর করা লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যায় আপিল বিভাগে। ওই বছরের ৮ নভেম্বর রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিজিএমইএর ১৬ তলা ভবনটি অবিলম্বে সংগঠনের নিজ খরচায় ভেঙে ফেলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হলে ৮ ডিসেম্বর রিভিউ আবেদন করে বিজিএমইএ।

এর আগে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে বিজিএমইএ ভবন একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ ৬৯ পৃষ্ঠায় রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এই লিভ টু আপিল খারিজ করে রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘বেগুনবাড়ী খাল’ ও ‘হাতিরঝিল’ জলাভূমিতে অবস্থিত ‘বিজিএমইএ কমপ্লেক্স’ নামে ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এ ক্ষেত্রে ভবন ভাঙার খরচ আবেদনকারীর (বিজিএমইএ) কাছ থেকে আদায় করবে তারা।

বিজিএমইএকে শেষবারের মতো এক বছরের সময় দিয়েছে আপিল বিভাগ।

এর আগে বিজিএমইএর আইনজীবী এডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী মুচলেকা দাখিল করেন। আদালত ওই মুচলেকা গ্রহণ করে তাদেরকে ভবন ভাঙতে এক বছর সময় দেন।

আইনজীবী মনজিল মোরশেদ সাংবাদিকদের জানান, এখন আদালতের বেধে দেয়া সময়ে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষকে তাদের সব মালামাল ও কার্যক্রম সরাতে হবে। রাজউক ভবন ভাঙার কাজ শুরু করবে।

/এসআর

Comments