মাজার পরিচালনায় দ্বন্দ্ব; ওরস থেকে প্রতিপক্ষের সাত বছরের শিশু কন্যাকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ

প্রকাশিত: ১২:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০১৮

একুশনিউজ২৪: সুনামগঞ্জে মাজার পরিচালনায় দুই পরিবারের দ্বন্দ্বের জের ধরে ওরস মাহফিল চলাকালে প্রতিপক্ষের সাত বছরের এক কন্যাশিশুকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ অপর পক্ষের এক চল্লিশোর্ধ্ব এক যুবক।

গতকাল মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জের বিশসম্ভপুরে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় শিশুটিকে গতকাল রাতে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

জানা যায়, গতকাল রাত ৮টার দিকে বিশসম্ভপুর উপজেলার সুলকাবাদ ইউনিয়নের সলুক শাহ মাজার প্রাঙ্গণ থেকে শিশুটিকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হাসান নামের প্রতিপক্ষ যুবক।

বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোল্লা মো. মনির জানান, ঘটনার পরই শিশুটির দেওয়া ভাষ্যমতে হাসানকে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আজ বুধবার সকালে শিশুটির মা  বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলো একই গ্রামের হাসান, জসীম উদ্দিন ও দানা মিয়া।

সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. বেনজামিন বলেন, সাত বছরের শিশুটিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালে আনা হয়। তখন অ্যাকটিভ ব্লিডিং হচ্ছিল এবং সেখানে টিআরও আছে। এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আমরা তাঁকে সিলেট হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করেছি।

শিশুটির আত্মীয়স্বজন ও মামলার বরাত দিয়ে ওসি মোল্লা মো. মনির বলেন, গতকাল রাতে সলুক শাহ মাজার প্রাঙ্গণে বার্ষিক ওরস মাহফিল চলছিলো। শিশুটি সেখানেই খেলা করছিলো। তখন হাসান ও তার কয়েকজন সহপাঠী শিশুটিকে তুলে নিয়ে যায় এবং পাশের একটি স্থানে ধর্ষণ করে।

শিশুটির চিৎকারের আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে হাসান ও তাঁর সহযোগীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে হাসানকে গ্রেপ্তার করে। ওসি বলেন, এই মাজারের পরিচালনা ও খাদেম নিয়ে গ্রামের দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

শিশুটির এক ফুফু (৪৫) গণমাধ্যমকে বলেন, আমরার বাড়িত একটা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের মধ্যে এই ঘটনাটা ঘটাইছে। এর আগে থেকেই আমরারে অনেক উৎপাত করতাছে। আমরারে এইখান (মাজার) থেইকা বাইর কইরা দিত। এর পরে আইজ সকালেও হইছে। আমরা চেয়ারম্যান সাহেবরে জানাইছি। এরারই ভাই-টাই নিয়া ওরে এইখান থেইকা (তুলে) নিছে। ৮টার সময় এ ঘটনা।

শিশুটিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই গ্রামের এক যুবক (৩৫) গণমাধ্যমকে বলেন, চারজন লোক নাকি ওরে ধইরা নিয়া ইউনিয়ন পরিষদের অফিসের পেছনে ধর্ষণ করছে। তার মধ্যে একটা ছেলের নাম বলছে। ছেলেটার নাম হইছে হাসান। মেয়েটার মুখ থেইকা শুনছি।

ওই যুবক আরো বলেন, এখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তাররা বলছে, এখানে চিকিৎসা করা সম্ভব না। সঙ্গে সঙ্গে সিলেট পাঠাইয়া দিছে।

এ ব্যাপারে সুলকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রওশন আলী আজ সকালে বলেন, মাজার নিয়ে শিশুটির পরিবার ও হাসানের পরিবারের মধ্যে ঝামেলা ছিলো। শিশুটির পরিবার থেকে এখন মাজারের খাদেমের দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু একই গ্রামের হাসানও সলুক শাহ পীরের ভক্ত।

সেও তাদের অনুমতি না নিয়েই জোর-জবরদস্তি করে মাজারে প্রবেশ করতে যায়। কয়েক দিন আগে আমার কাছে দুই পক্ষ এসেছিলো। আমি তাদের নিয়ে মিটমাট করে দিয়েছি। কিন্তু শিশুটির প্রতি যে আক্রোশ ছিলো তা তো বুঝতে পারিনি।

/এমএম

Comments