ফুটপাতের দোকানি রমজান চোরাই তেলের ব্যবসা করেই কোটিপতি!

প্রকাশিত: ১১:১১ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০১৯

বি এইচ মোহাম্মদ: ভ্রাম্যমাণ হলুদ বিক্রেতা ছিলেন রমজান আলী। ধামায় ৫/৬ কেজি হলুদ নিয়ে যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ও আমবটতলা বাজারে বিক্রি করতেন। পিতা মারা যাওয়ার পর তিনিই হলুদ বিক্রি ব্যবসা ধরে রাখেন। কিন্তু হঠাৎ করে রমজান আলী শূন্য থেকে কোটিপতি বনে যান। তার এই পরিবর্তন নিয়ে এলাকায় ছিলো নানা গুঞ্জন।

অভিযোগ ছিলো রমজান আলী একজন কালোবাজারী। তিনি চোরাই তেলের ব্যবসা করেই গড়ে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার কারণে কেউ তার অবৈধ ব্যবসার বিরুদ্ধে মুখ খুলতেন না।

শনিবার (১৫ জুন) রমজানকে আটক ও গোডাউন থেকে ৬০ ব্যারেল চোরাই সয়াবিন তেল উদ্ধার হওয়ার পর তার অপকর্ম ফাঁস হয়ে পড়েছে। রমজানের কোটিপতি হওয়ার কারণও অনেকটা পরিস্কার হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের সজিয়ালী গ্রামের পূর্ব পাড়ার মৃত ফনো বিশ্বাসের ছেলে রমজান আলী। ভিটে বাড়ি ছাড়া পৈত্রিক কোন সম্পত্তি ছিলোনা। তার পিতা ছিলেন ভ্রাম্যমান একজন হলুদ বিক্রেতা। পিতার সাথেই আসতেন হলুদ বিক্রি করতে।

১৯৯৮ সালের দিকে তিনি নিজেই চুড়ামনকাটির সবজি বাজার ঘেষে একটি স্থানে চট পেতে হলুদ বিক্রি শুরু করেন। বর্তমানে সেই স্থানেই গড়ে তোলা হয়েছে একটি টোঙ দোকান। সেখানে বিক্রি করা হয় লবন, হলুদ, চিনি, খোল, ভুষি, তেল, ডাল ইত্যাদি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০০০ সালের পর থেকে হঠাৎ করে রমজানের ভাগ্য বদলাতে থাকে।

তিনি চুড়ামনকাটি বাজারের মাছ বাজারের গা ঘেষে ৪ শতক জমি কিনে এক তলা বাড়ি নির্মাণ করে। পরে বাড়িটি ভেঙ্গে তিনতলা আলিশান ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। ওই ভবনের নিচেই তৈরি করা হয়েছে একটি গোডাউন।

রমজানের হঠাৎ করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। নাম প্রকাশ করার শর্তে চুড়ামনকাটি বাজারের দুইজন ব্যবসায়ী জানান, শূন্য হাতে চুড়ামনকাটি বাজারে হলুদ বিক্রি করতে আসা রমজান আলী এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। বর্তমানে তার বাজারে মোট ৮টি গোডাউন রয়েছে।

যশোর ট-১১-২৬৯৭ ও যশোর ট-১১-১৯১৫ নম্বরের টাটা ১৬১৫ মডেলের দুটি ট্রাকের মালিক হয়েছেন। এছাড়া রয়েছে ইঞ্জিন চালিত তিনটি আলমসাধু। চুড়ামনকাটিতে ট্রাক থেকে টোল আদায়ের স্থানে পাশেই তিনি ২৫ লাখ টাকার জমি ক্রয় করেছেন।

এলাকার অনেকেই জানান, রমজান একজন কালোবাজারী তা অনেকেই জানতেন। কিন্তু দাপটের কারণে সবাই নিশ্চুপ থাকতেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জানিয়েছেন, রমজানের গোডাউনে রাতের আধারে মালামাল লোড-আনলোড হয়ে থাকে। যা এলাকার অনেকেই জানেন। তিনি দীর্ঘদিন থেকেই চোরাই মাল কেনাবেচার সাথে জড়িত।

এছাড়া তিনি ভেজাল তেল, ভারতীয় চিনি, নিম্নমানের খল, ভুষি, ডালমহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। বিগত দিনে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে এসব অভিযোগে রমজানের কাছ থেকে তিনবার জরিমানা আদায় করেছে।

শনিবার তার একটি গোডাউন থেকে পুলিশ ৬০ ব্যারেল চোরাই সয়াবিন তেল উদ্ধার ও তাকে আটকের পর তার চোরাই কারবার প্রকাশ্যে এসেছে। সূত্র জানায়, রমজান এতোদিন গোপনে চোরাই ও ভেজাল তেলের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তাকে আটকের পর অনেকের বলতে শোনা যায়, “চোরের দশদিন আর গৃহস্তের একদিন”।

অবৈধ অর্থ ছাড়া কেউ রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যেতে পারেনা। সাজিয়ালী গ্রামের একজন রিকশা চালক জানান, ফনো বিশ্বাস হতদরিদ্র একজন মানুষ ছিলেন। তার মোট তিনজন ছেলে। এরমধ্যে বড় ছেলে রমজান আলী। মেঝে ছেলে গোলাম আলী অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে কয়েক বছর আগে নিজ বাড়িতেই মারা যান।

আর ছোট ছেলে বক্কার আলী আমবটতলা ও সলুয়া বাজারে টোঙ দোকানে তেল, খৈল, ভুষি, ও চিনি বিক্রি করেন। হঠাৎ করে রমজানের কোটিপতি বনে যাওয়া নিয়ে সাজিয়ালীতেও ছিলো নানা আলোচনা-সমালোচনা। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রমজানকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই চোরাই সিন্ডিকেট সম্পর্কে না তথ্য মিলতে পারে।

এমএম/

Comments