প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে ছাত্রলীগের সম্ভাব্য কমিটি

প্রকাশিত: ১০:৪৮ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: ছাত্রলীগের সম্ভাব্য নতুন কমিটি এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেবিলে। সংগঠনের সভাপতি পদে ১১১ জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ২১২ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন যাচাই-বাছাই করে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে। ওই তালিকা থেকেই ঘোষণা করা হবে নতুন শীর্ষ নেতৃত্ব।

ভোটের পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বের করে আনতে চাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মুখ খোলেননি দলীয় সভানেত্রী। পদ-পদবি পেতে সংগঠনের গঠনতন্ত্রে বয়সসীমা ২৭ বছর থাকলেও শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এক বছর বাড়িয়ে দেন। অর্থাৎ নেতৃত্বে আসতে বয়সসীমা ২৮ বছর করা হয়।

ওই দিন রাতেই দলের কয়েকজন নেতা গণভবনে যান। সেখান থেকে বেরিয়েই নেতারা জানান, বয়সসীমা ২৮ বছর ৩৬৪ দিন করা হয়েছে। তবে এ কথা মানতে নারাজ ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতারা। তাদের বক্তব্য, নেত্রী আমাদের ২৮ বছর বলেছেন। আমরা ২৮ বছর করার পক্ষে।

এ নিয়ে গতকাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। ছাত্রলীগ নেতারা জানান, নেত্রী যে নির্দেশনা দেবেন-সেটাই চূড়ান্ত। অন্য কারো কথা আমরা শুনতে বাধ্য নই।

দলের একটি সূত্র জানিয়েছে, সংক্ষিপ্ত তালিকায় যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্যতম হলেন, আদিত্য নন্দী, মাজহারুল ইসলাম শামীম, রেদওয়ান চৌধুরী শোভন, হোসাইন সাদ্দাম, চৈতালী হালদার চৈতী, দিদার মোহাম্মদ নিয়ামুল ইসলাম, দেলোয়ার শাহজাদা, সাইফ বাবু, হাবিবুল্লাহ বিপ্লব, খাদেমুল বাশার জয়।

এ ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কাউকে সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে আনা হলে যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন— বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ কনক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল।

নেতৃত্বে আসার আলোচনায় যারা রয়েছেন তাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ অভিনন্দন জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ প্রচার করছেন তাদের দোষত্রুটি। এর মধ্যে একজন শক্তিশালী সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীর বিরুদ্ধে বিয়ে করার অভিযোগ উঠেছে। তার স্ত্রী একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেও প্রচার করছেন কেউ কেউ।

আরেকজন শক্তিশালী প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে ব্যবসার অভিযোগ। আলোচনার শীর্ষে আসা নেতাদের নামে ওঠা অভিযোগগুলো সরকারের বিভিন্ন সংস্থা যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তাদের কপাল পুড়তে পারে। আর অভিযোগের সত্যতা না পেলে তাদের মধ্যেই দুই বছরের জন্য পরবর্তী নেতা নির্বাচিত করা হবে।

কমিটিতে পদ পেতে ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন ছাত্রনেতারা। পদ-পদবি নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সবাই ব্যস্ত যার যার পছন্দের প্রার্থীকে বের করে আনার জন্য।

কমিটি হতে আরো দু-এক দিন লাগবে : পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হাজির হন শত শত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী। মিলনায়তনে আসেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।

এ ছাড়াও ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে অজয় কর খোকন, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সিদ্দিকী নাজমুল আলম প্রমুখ।

দ্বিতীয় তলায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ সময় এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বয়সসীমা নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাউন্সিল অধিবেশন বিরতি দেওয়া হয়। তারপর তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা গণভবনে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।

প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর মুগদায় একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখান থেকে গণভবনে ফিরে নেতাদের কাছে থাকা তালিকা জমা দিতে বলেন। নেতাদের তিনি বলেন, তালিকা ও পদপ্রত্যাশীদের বায়োডাটা জমা দিয়ে যাও। আমি দেখে কমিটি ঘোষণা করবো। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের কোনো পছন্দের প্রার্থী আছে কিনা জানতে চান। জবাবে সবাই বলেন, আপনার পছন্দই আমাদের পছন্দ।

এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেন, তোমাদের পছন্দ থাকলে চিরকুটে দিয়ে যাও, মিলিয়ে দেখবো। এছাড়াও স্যাটেলাইট সফলভাবে উৎক্ষপণ করার পর ছাত্রলীগের প্রতিটি ইউনিটিতে আনন্দ র‌্যালি ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

গণভবন থেকে বের হয়ে দুজন নেতা জানান, স্যাটেলাইট উৎক্ষপণের জন্য দুই রাত ঘুমাতে না পারার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তালিকা রেখে যেতে বলেছেন। কমিটি দু-এক দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যাচাই-বাছাই করে ঘোষণা করবেন।

গণভবন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ফিরে এসে দ্বিতীয় অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, প্রার্থীদের তালিকা আমরা আমাদের অভিভাবক শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনিই দেবেন। এই ঘোষণা দিয়ে তিনি সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। সেই সঙ্গে স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষপণের সাফল্যে গতকাল বিকালেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন থেকে সোহাগ-জাকিরের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মিছিল বের করে। আজ রাজধানীতে ও আগামীকাল সারা দেশে ছাত্রলীগের আনন্দ র‌্যালির ঘোষণা করেন তারা।

আর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন উপস্থিত নেতা-কর্মীদের জানান, কমিটির জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে কিছু নাম নেত্রীর কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই নেত্রী নতুন নেতৃত্বের বিষয় আমাদের জানিয়ে দেবেন। হয়তো দু-এক দিন সময়ও লাগতে পারে কমিটি ঘোষণা আসতে। আমরা তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।

এর আগে গত শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্ব ঠিক করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

/এমএম

Comments