‘পুরুষ নির্যাতন দমন আইন চাই’; পুরুষ দিবসে ‘মেন’স রাইটস’র র‌্যালি

প্রকাশিত: ২:৫৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১৯, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসে রাজধানীতে মানববন্ধন করেছে ‘বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন।

মানববন্ধন থেকে সংগঠনটি পুরুষ নির্যাতন দমন আইন প্রণয়েণের দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটির দাবি বাংলাদেশে পুরুষরাই বেশি বৈষম্যের শিকার।

বিদ্যমান আইন-কানুন বিচার ব্যবস্থা পুরুষদের বিপক্ষে, বলছেন সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।

বিশ্বের অনেক দেশে কিছু বেসরকারি সংগঠন আজ সোমবার (১৯শে নভেম্বর) ‘আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস’ পালন করবে।

বাংলাদেশেও এ উপলক্ষে ঢাকায় ‘বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন ‘পুরুষ রক্ষা আন্দোলনের’ সূচনা করছে।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শেখ খায়রুল আলম একজন ছোট-খাট ব্যবসায়ী। নারাণগঞ্জের ফতুল্লায় একটি ফুড কোম্পানি ডিলারশীপ নিয়ে ব্যবসা করেন। সেই সঙ্গে একটি পোলট্রি ফার্মও চালান।

আর মহাসচিব ফারুক সাজেদ পেশায় প্রকৌশলী। প্রায় দশ বছর প্রবাসে ছিলেন। দুবাই এবং কাতারে কাজ করেছেন।

তারা দুজনেই মনে করেন, বাংলাদেশের আইন-কানুন, বিচার-ব্যবস্থা থেকে সবকিছু কার্যত পুরুষদের বিপক্ষে, এখানে পুরুষরা বৈষম্যের শিকার, ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত।

মাসখানেক আগে তাদের সংগঠনটি একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। আজ ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ করে তারা পুরুষ অধিকার রক্ষায় তাদের আন্দোলনকে বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে উঠে আসে  সংগঠনটির কর্মতৎপরতা। সংগঠন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা বিবিসি বাংলাকে বলেন প্রতিষ্ঠাতা শেখ খায়রুল আলম।

তিনি বলেন, আমি ব্যবসা করতাম। পারিবারিক সূত্রে আমার বিয়ে হয়। তিন মাস পর আমার স্ত্রীকে ঘরে তোলার কথা ছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ীর লোকজন ঘরে তুলতে দিচ্ছিলো না।

আমরা পারিবারিকভাবে চাপ দেই, স্ত্রীকে দেয়ার জন্য। কিন্তু ওরা সেটা না করে যৌতুকের মামলা করে আমার বিরুদ্ধে। অভিযোগ তোলে যে আমি স্ত্রীকে মারধর করেছি যৌতুকের জন্য।

আমার এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান সবাই বলেছেন, এই অভিযোগ মিথ্যে। কিন্তু কোর্ট এই কথা গ্রহণ করেনি।

.

শেখ খায়রুল আলম বলছেন, এটি তিন বছর আগের ঘটনা। তার ভাষায়, কোর্ট নারী ভিক্টিম যা বললো, সেটাকেই গ্রহণ করলো, এলাকার লোকে কি বললো, সেটা মানলো না।

প্রথম মামলায় জামিন নিয়ে আসার পর আমার বিরুদ্ধে আবার নারী নির্যাতনের মামলা দিয়েছে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এই অভিযোগের তদন্ত হয়েছে।

তদন্তে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। তারপর আমি ৭৭ দিন বিনা অপরাধে হাজত খেটেছি,- বলেছিলেন খায়রুল আলম।

শেখ খায়রুল আলম বলেন, তিনি আদালতে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেন। অনেক মানবাধিকার সংগঠনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু তার মনে হয়েছে, পুরুষদের পক্ষে কেউ নেই, পুরুষের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই।

আমি আইন ও সালিশ কেন্দ্রে গিয়েছি। উনারা বলে, আমরা পুরুষের কোন কাজ করি না। এরপর ব্লাস্ট বলে আরেকটি সংগঠনের কাছে গিয়েছি। উনারাও বলেন,আমরা পুরুষের কাজ করি না।

আমি বললাম, আমি তো নাগরিক এদেশের। নাগরিক হিসেবে আমার আইনের সুবিধা পাওয়ার অধিকার আছে। উনারা বললেন, আমরা পুরুষের মামলা করি না।

তাহলে আমরা পুরুষরা কোথায় যাব? আমাদের পুরুষদের তো একটা যাওয়ার জায়গা থাকতে হবে।

সেখান থেকেই এই সংগঠনের জন্ম। শেখ খায়রুল আলম তৈরি করলেন, পুরুষদের অধিকার রক্ষার সংগঠন।

বাংলাদেশের যে আইন কানুন, যে বিচার ব্যবস্থা সেটা পুরুষের বিপক্ষে চলে গেছে। বাংলাদেশের আইন আসলে পুরুষের বিপক্ষে। আমরা সেটা বদলাতে চাই, বলছেন তিনি।

শেখ খায়রুল আলম বলছেন, তারা প্রচুর সাড়া পাচ্ছেন। অনেক পুরুষ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। নানা বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ চাইছেন।

প্রতিদিন দেশ বিদেশে থেকে আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। অনেকে কান্নাকাটি করেন। কিন্তু আমরা কি করতে পারি। আইন তো আমাদের পক্ষে না।

ফারুক সাজেদও এই আন্দোলনে শরিক হয়েছেন একজন ভুক্তভোগী হিসেবে। কিন্তু নিজের জীবনের ঘটনা তিনি এখনই প্রকাশ করতে চান না। বললেন, সময় আসলে প্রকাশ করবো।

ফারুক সাজেদের মতে, বাংলাদেশে পুরুষদের বিরুদ্ধে নির্যাতন, বৈষম্যের ব্যাপারটি এখন বিরাট সামাজিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশে সবার জন্য প্লাটফর্ম আছে। নারীদের জন্য, শিশুদের জন্য, তৃতীয় লিঙ্গের জন্য। এমনকি পশু অধিকার রক্ষার জন্য। কিন্তু পুরুষদের জন্য কোন প্লাটফর্ম নেই।

বাংলাদেশে পুরুষ এখন এতটাই ভালনারেবল যে তার নামে একটি মামলা দিলে, একটা অভিযোগ করলে, সেটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। সত্য মিথ্যে যাচাইয়ের কোন ব্যাপার এখন আর নেই এখানে।

বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশনের’ কাছে প্রতিদিন অনেক ফোন আসে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তবে এর মধ্যে পারিবারিক সমস্যাই বেশি।

কিছু উদাহারণ দিলেন ফারুক সাজেদ। যেমন ধরা যাক, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা হচ্ছে না, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে যখনই কোন টানাপোড়েন তৈরি হচ্ছে, তখন স্ত্রী গিয়ে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছে একটা ইস্যু তৈরি করে। আজকে সকালেও আমাকে একজন ফোন করে এরকম একটা অভিযোগ করেছে।

তিনি বলছেন, এরকম ক্ষেত্রে পুরুষরা একেবারে অসহায়। অনেকের ক্ষেত্রে, দেনমোহরের অংক যদি অনেক বড় থাকে, তখন পুরুষরা চাইলেও বিবাহ বিচ্ছেদও ঘটাতে পারছেনা।

কিন্তু এটা তো বাস্তবতা যে বাংলাদেশে এই আইনগুলো করাই হয়েছে নারীকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। কারণ বাংলাদেশে তো তারাই বেশি নির্যাতিত হন।

ফারুক সাজেদ বলছেন, আমরাও মানি, নারীদের জন্য বিশেষ আইন তৈরি করা উচিৎ। কিন্তু আইনটা এমনভাবে তৈরি করা উচিৎ, যেন কেউ এটা পুরুষের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করতে না পারে।

‘বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন’ এখন আইন বদলানোর জন্য আন্দোলন করছে।

বাংলাদেশে এখন যে মি টু আন্দোলন শুরু হয়েছে, সেটিও নির্দোষ পুরুষদের হয়রানির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে বলে উদ্বিগ্ন ফারুক সাজেদ।

আমাদের কথা হচ্ছে, প্রমান ছাড়া যেন কাউকে ভিক্টিম করা না হয়। আমরা সব নির্যাতনের বিপক্ষে। সেটা পুরুষ হোক, নারী হোক। কিন্তু কোনো নির্দোষ যেন ভিক্টিম না হয়। যেন সামাজিকভাবে হেয় না হয়।

/আরএ

Comments