পুত্রহারা সেই ইমামকে ‘ভারতরত্ন’ দেয়ার দাবি কবীর সুমনের

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩১, ২০১৮

এস আর : ভারতের কলকাতার আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমাম ইমদাদুল রশিদিকে ভারতরত্ন খেতাবে ভূষিত করার দাবি জানিয়েছেন নন্দিত গায়ক কবীর সুমন। ইমাম রশিদির গণসংবর্ধনার আয়োজন করারও দাবি তুলেছেন, বাংলা গানের দ্রোহের বীজ বপনকারী এই শিল্পী।

রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার বিকেলে রেলপাড় এলাকা থেকে নিখোঁজ হয় ইমাম রশিদির ১৬ বছর বয়সী ছেলে শিবতুল্লা রশিদি। বুধবার তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে পুত্রের জানাজার সময় তিনি আসানসোলবাসীর কাছে শান্তির আহ্বান জানান। বলেন, কোনও প্রতিহিংসা নয়। প্রতিশোধ নিতে যদি কারোর মৃত্যু ঘটানো হয়, তাহলে আমি এই শহর ছেড়ে চলে যাব। আমি তোমাদের সঙ্গে ৩০ বছর ধরে আছি, আমাকে যদি তোমরা ভালোবাসো তাহলে আর কাউকে যেন এভাবে মরতে না হয়।

কবীর সুমন তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, সাচ্চা মানুষ নুরানি মসজিদের ইমাম, যাঁর ছেলেকে এভাবে খুন করল হিন্দুত্বের অভিভাবকরা। এই ইমাম সাহেবকে ভারতরত্ন দেওয়া হবে না তো কাকে দেয়া হবে ? সব রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে এ রাজ্যের তৃণমূল, সি পি আই এম, বিজেপি, নকশালপন্থী বিপ্লবীরা কী বলেন?

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জীর উদ্দেশ্যে সুমন বলেছেন, আমাদের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আসানসোলের নুরানি মসজিদের ইমামের জন্য ভারতরত্ন দাবি করো, পাড়ায় পাড়ায় প্রতিরোধের ডাক দাও।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মমতার তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কবীর সুমন কলকাতার যাদবপুরের সাংসদ হয়েছিলেন। নির্বাচনের এক বছরের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হলে দল ছাড়েন তিনি।

আসানসোলবাসীর দাবি “এতদিন যে ভাবে মিলেমিশে ছিলাম, তেমনই থাকতে চাই”

যা হবার হয়েছে। এবার সামনে তাকানো। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শহরে শান্তি ফেরানোর প্রয়াস। ঠিক সেই চেষ্টাই শুরু হয়েছে গোষ্ঠী সংঘর্ষে তেতে থাকা আসানসোল, রানিগঞ্জে।

২৬ মার্চ রানিগঞ্জের বড়বাজারে সংঘর্ষের সময় শ’খানেক দোকানে ভাঙচুর, লুঠপাট হয়েছিল; হয়েছিল অগ্নিসংযোগও। সেই অশান্তি দূরে ঠেলে স্বাভাবিক হচ্ছে রানিগঞ্জ। স্বাভাবিক করছেন এলাকার মানুষজন সকলেই।

শুক্রবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান সারানোর কাজ চলছে। কাকা-ভাইপো পবন খেতান ও সঞ্জিত খেতানের পুড়ে যাওয়া কাপড়ের দোকান মেরামত করছেন মহম্মদ দানিশ আনসারির নেতৃত্বে পাঁচ যুবক।

সঞ্জিতের কথায়, ‘ঘটনার দিন গুড্ডু খানের জুতোর দোকানও পুড়েছিল। কিন্তু, দমকল আসতেই গুড্ডু আমার দোকানে এসে বলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা পাশে আছি’।

সেই পাশে থাকার ছবিটাই এ দিন স্পষ্ট। দানিশের সঙ্গে কাজ করছিলেন চৈতন কেওড়া, মহম্মদ আরবাজ। তারা বলে দিলেন, ‘যারা ঝামেলাবাজ, তারা গোলমাল পাকিয়ে চলে গিয়েছে। আমাদের ভিটেমাটি এই শহর। এত দিন যে ভাবে মিলেমিশে ছিলাম, তেমনই থাকতে চাই।’ আর এক জুতোর দোকানের মালিক মহম্মদ আখতার আনসারি বললেন, ‘সবাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যত দিন দোকান মেরামতি না হচ্ছে, তত দিন তাঁদের দোকানে বসতে বলছেন।’

আসানসোল বাজারে ১৫ বছর ধরে এক ছাদের তলায় দুই দোকান চালান মহম্মদ উসমান ও ধনপতি রায়। সকালে ফল, বিকেলে তেলেভাজা খাবার বিক্রি করে দুজনে। সাম্প্রতিক অশান্তি সেই বন্ধুত্বে চিড় ধরাতে পারেনি। দু’জনেই বলছেন, ‘এই দোকান চলছে আমাদের বন্ধুত্বের জন্য।

এখানে পয়সার লেনদেনের জায়গা নেই। ধর্মের বেড়াও নেই।’ যেমন আসানসোলের তালপুকুরিয়া। এখানে পাঁচশো পরিবারের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু। স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ প্রসাদ, ইমরান খানরা জানান, একশো বছর ধরে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পাশাপাশি বাস করছে। দুর্গাপুজো বা মহররম— সব উৎসবে সবাই সামিল হন।

সূত্র : আরটিএনএন

Comments