পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য প্রতিহিংসামূলক: মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত: ৮:৫১ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই দেশের আইন অনুযায়ী পাসপোর্ট জমা দিয়ে ট্রাভেল পারমিট নিয়েছেন। সরকারের লোকদের পক্ষ থেকে সামাজিক মাধ্যম ও গণমাধ্যমে তারেক রহমান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করেছেন মর্মে যে প্রচার চালাচ্ছে তা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক।

আজ মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১ টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, তারেক রহমান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সন্তান। তিনি একজন সম্মানিত নাগরিক। তার বিরুদ্ধে সরকার ভিত্তিহীন অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রাচার বন্ধের জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।

ফখরুল বলেন, সরকারের লোকজনের এসব বক্তব্য-বিবৃতির কারণে তারেক রহমানের জীবন এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তারেক রহমানের বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে ‘অদ্ভুত তথ্য’ দিয়েছেন বলে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, জন্মসূত্রে বাংলাদেশি নাগরিক তারেক রহমানের পাসপোর্ট যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের মাধ্যমে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে জমা দেয়ার একটি নথি দেখিয়েছেন বিনা ভোটে ক্ষমতা দখলকারী বর্তমান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।  তারেক রহমানের নাগরিকত্ব বিষয়ে তিনি যে অদ্ভুত, যুক্তিহীন ও বেআইনি মন্তব্য করেছেন- আমরা (বিএনপি) তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, কী কী কারণে একজন নাগরিক জন্মসুত্রে প্রাপ্ত নাগরিকত্ব হারাতে পারেন-এটাও যিনি জানেন না-তেমন একজন ব্যক্তির শুধু এধরনের অনির্বাচিত সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা সম্ভব এবং তা জাতির জন্য লজ্জাজনক।

তিনি বলেন, সরকার ও সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এটা স্পষ্টই প্রমানিত যে, দেশে তারেক রহমানের জীবন নিরাপদ নয়। এমতাবস্থায় তারেক রহমান বিশ্বের অসংখ্য বরেণ্য রাজনীতিবিদ, সরকার বিরোধী বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতোই সাময়িকভাবে বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন এবং সঙ্গত কারণেই তা পেয়েছেন। এই প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ হিসেবেই তিনি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগে তার পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন। সে দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার পাসপোর্ট জমা রেখে তাকে ট্রাভেল পারমিট দেয়া হয়েছে। কাজেই এই মূহুর্তে বাংলাদেশের পাসপোর্ট তার কোনো কাজে লাগছে না। যখনই তিনি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হবেন তখনই তিনি দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতোই পাসপোর্টের জন্য আবেদন জানাতে এবং তা অর্জন করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, জমা রাখার জন্য বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে তার পাসপোর্ট লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানোর যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে তার দ্বারাও কোনো আইন কিংবা যুক্তিতে প্রমাণ হয় না যে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেছেন। এ ধরণের উদ্ভত ধারণাকে তত্ত্ব কিংবা তথ্য হিসেবে সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন কিংবা ফেসবুকে প্রচার উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

তারেক রহমানের নাগরিকত্ব নিয়ে ‘প্রলাপ বকা এবং অপপ্রচার চালানো’ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবি জানান মির্জা ফখরুল।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে যে আইনি নোটিশ দেয়া হয়েছে-দেশের জনগণ তার জবাব জানার জন্য অপেক্ষা করছে। দেশের জনগণ ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছে যে, তাদের কষ্টার্জিত বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে লন্ডন সফরকারী বিশাল বহরের একমাত্র অর্জন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংগ্রহ করা তারেক রহমানের ২০০৮ সালে ইস্যু করা পাসপোর্টের ৩টি পাতা এবং বৃটিশ স্বরাষ্ট্র বিভাগের অসংখ্য ভুলে ভরা এক লাইনের রহস্যজনক একটি চিঠির ফটোকপি। কি বিচিত্র এই সরকার ! কি দুর্বল তাদের অপকৌশল ! ’

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দৃঢ়তার সাথে স্পষ্ট ভাষায় দেশবাসীকে জানাতে চাই যে, তারেক রহমান জন্মসূত্রে বাংলাদেশের একজন গর্বিত নাগরিক। তিনি তার এই প্রিয় দেশের নাগরিক ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন ইনশাল্লাহ।

তিনি বলেন, অবৈধ ফখরুদ্দিন-মঈনউদ্দিন সরকারের নৃশংস রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে পঙ্গু অবস্থায় সুচিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে তারেক রহমান ২০০৮ সালে লন্ডনে যান এবং পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় এখনও সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। ইতোমধ্যে তার অনুপস্থিতিতে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মিথ্যা ও বানোয়াট মামলায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি থেকে শুরু করে মন্ত্রী, নেতারা প্রতিনিয়ত তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটালেও দেশের জনগণ যাতে তারেক রহমানের জবাব শুনতে না পারে সেজন্য দেশের সব প্রচার মাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ ও প্রচার নিষিদ্ধ করে বাক স্বাধীনতার মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করে বিশ্বের এক নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুহ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম প্রমুখ। ইত্তেফাক।

/এমএম

Comments