‘নির্বাচনের নামে তামাশা দেখতে চাই না’

প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ, মে ২৯, ২০১৮

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট :  দেশের সার্বিক অগ্রগতি, জনগণের শান্তি-নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে সত্যিকারের ভাল জাতীয় নির্বাচন দেয়ার দাবি করে বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, ‘নির্বাচনের পরে যেন দেশে কোনও ধরনের জ্বালা-পোড়াও না হয়, দেশের মানুষ যেন শান্তি ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগে না থাকে সেজন্য আগামী ৫ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার চাই। নির্বাচনের নামে তামাশা দেখতে চাই না । একটা জাতীয় সরকার দিন, দেশ ঠিক করে দেবো। এ ব্যাপারে আমি সমস্ত রাজনৈতিক দলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমি আশা করি সবাই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।’

মঙ্গলবার (২৯ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে অল কমিউনিটি ক্লাবে বিকল্পধারা বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

বি. চৌধুরী বলেন, ‘সবচেয়ে সাংঘাতিক যেটা, আমরা সবচেয়ে ভয়ে আছি যে জন্য তা হচ্ছে নির্বাচনোত্তর সহিংসতা। ভোটের পরে ভোটার-রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বাড়িতে আগুন জলবে- এটা হতে দেয়া যাবে না। অতীতের এসব সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। তাহলে সমাধান কী? সমাধান হচ্ছে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়া।’

নির্বাচনের পরে সহিংসতা হবে না, আগুন জালানো হবে না, অন্যায় অত্যাচার হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের নিরাপত্তা দিতে পারবো, অগ্রগতি করতে পারবো এবং ঝগড়া-বিবাদ কমে যাবে, যদি নির্বাচনের পরে ৫ বছরের জন্য একটি জাতীয় সরকার গঠন করা হয়।’

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সত্যিকারের ভাল জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে, আমরা তা আদায় করবো। যদি দিতে না চান জনগণ এটা আদায় করে নেবে। নির্বাচনের ১০০ দিন আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। তার কারণ সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীরা সরকারি প্রভাব খাটাবে, আর আমরা নির্বাচনের তামাশা দেখবো, এটা জনগণ দেখতে রাজি নয়। ভোটারকে নিরাপত্তা দিতে হবে। সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। এটা আমাদের সামরিক বাহিনী, বিদেশের নয়। তারাও এদেশের নাগরিক, তারাও এদেশের ভোটার। তাদের মা-বোনেরাও ভোটার। তাই তাদেরকে নিশ্চয়ই প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করতে হবে। আর ইসি মেরুদণ্ডহীন হলে চলবে না, একটা সাহসী ও নিরপেক্ষ কমিশন আমাদের আনতেই হবে। সেই ব্যবস্থা আমরা করবোই।’

খালেদা জিয়ার রায়ের বিষয়ে বি. চৌধুরী বলেন, ‘যখনই বিচার হয়, বিচারের রায় আসে, সুপ্রিম কোর্ট-হাইকোর্টের রায়কে আপনারা বুড়ো আঙুল দেখান। এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের জন্যে এটা চরম লজ্জার।’

দুর্নীতিকে দেশের অগ্রগতির পথে প্রধান বাধা উল্লেক করে তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি আজ দেশের সব অগ্রগতিকে গ্রাস করছে। দুর্নীতি যে কোনও দেশের জন্যই সর্বগ্রাসী। সবচেয়ে বড় বাজেট কত লক্ষ কোটি টাকা আল্লাহ জানেন। এই বাজেটে কীভাবে টাকা চুরি হচ্ছে সেটা দেশের মানুষ দেখছে, সারা পৃথিবী দেখছে। ব্যাংক-শেয়ার মার্কেট লুটপাট হয়ে গেছে। আর এসব দেখেও হাসছেন আমাদের অর্থমন্ত্রী। তিনি বলছেন, এগুলো নাকি ঘুষ-দুর্নীতি না, স্পিড মানি, জোরে-সোরে কাজ করার জন্য। এটা জাতির সামনে কত বড় একটা তামাশা।’

বি.চৌধুরী বলেন, ‘রাজনৈতিক টর্চার আজকে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যত অত্যাচার, যত জুলুম রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হচ্ছে, এর আগে কখনো এমন হয়নি। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র এর আগে কখনো হয়নি। আজকে গণতন্ত্রের কণ্ঠ চেপে ধরা হয়েছে। আজকে ঢাকা শহরে যেখানে দেশের ২০ ভাগ মানুষ বাস করে সেখানে কোনো জনসভা করার অধিকার নেই কোনও বিরোধী দলের। কিন্তু সরকারি দল ইচ্ছা করলেই করতে পারছে। এভাবে চলতে দেয়া যায় না।’

সরকারের ধরপাকড় নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিনাবিচারে লাখের কাছাকাছি নেতাকর্মী জেলে আছে। এটা কোনো সভ্য দেশে হয় না, কোনো গণতান্ত্রিক দেশে হয় না, এটা সহ্য করা যায় না, যায় কি? আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক না? কেন এটা সহ্য করবো, আমাদের বুঝতে হবে। বিভিন্ন জায়গা কেচ করে রাজনীতিকদের হয়রানি করা হচ্ছে।’

অতীতের ভোটারবিহীন নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইলেকশন প্রসেস কিভাবে টেম্পার করা হয় আপনারা সেটি দেখিয়ে দিয়েছেন। ২০১৪ সালের ইলেকশন আমরা দেখেছি, খুলনাতেও দেখলাম। মৃত ভোটারও ভোট দিয়ে যায়। এভাবে চললে কে সাফার করছে? হু ইজ সাফারিং, বাংলাদেশের জনগণ কষ্ট ভোগ করছে। অপরাধ আপনাদের, শাস্তি পায় দেশের মানুষ। যখনই কোথাও সাধারণ মানুষ কাজে যায়, প্রত্যেক দিন ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হয়। আর ঘুষ খেয়ে খেয়ে যারা এত টাকা বানিয়েছে, যারা কালো টাকার মানি বনেছে তাদের ক্ষেত্রে ‘নো ট্যাক্স’। এগুলো সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। দেশে আজ কত রকম ক্রাইম। পত্রিকায় তাকিয়ে দেখেন, ক্রাইম অলওভার। সবগুলোর কারণ ব্ল্যাক মানি।’ এসময় তিনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ব্ল্যাক মানিকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘কালো টাকার মালিকেরা এই টাকা দিয়ে অস্ত্র কেনে। মানি এন্ড মাসেলস এন্ড আর্মস। এরা অস্ত্র কিনবে, এরা গুণ্ডা কিনবে। গণতন্ত্রকে নস্যাত করে দেবে। এটাই এদের প্ল্যান।’

দেশের মানুষের আজ জীবনের কোনও নিরাপত্তা নেই উল্লেখ করে বি.চৌধুরী বলেন, ‘কখন কে হামলা করবে, কে কখন হারিয়ে যাবে, গুম হয়ে যাবে তা কেউ বলতে পারছে না আজ। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশে আপনারা (সরকার) করে দিয়েছেন। এর কি কোনও রকম সমাধান নাই? অবশ্যই আছে। সেই সমাধান চায় জনগণ।’

বিকল্পধারার সভাপতি বলেন, ‘আমরা নিউক্লিয়াস গঠন করেছি, যুক্তফ্রন্ট করেছি। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আমরা প্রথম যুক্তফ্রন্ট গঠন করেছি। তার মাধ্যমে একটা নেতৃত্ব দিতে চাই। নেতৃত্বের ক্রাইসিস আছে বাংলাদেশের সব জায়গায়। যে নেতৃত্বে চরিত্র থাকবে, সততা থাকবে, যে নেতৃত্বের কথা বলার দাম থাকবে। আজ দেশে এমন নেতৃত্বের ক্রাইসিস। এই ক্রাইসিস দূর করতে হবে। ভাল, সৎ, দেশপ্রেমিক, চরিত্রবান নেতৃত্ব নিয়ে আসতে হবে। কোনো দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে, এমন মানুষের নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার থাকবে না। সেজন্য আমরা একটা শক্তির উত্থান চেয়েছি, যে শক্তির মাধ্যমে আমরা সরকারি দলের সমস্যাগুলোকে সাবধান করে দিতে পারবো। যেখানে গণতন্ত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে, জনঅধিকার নিশ্চিত হবে।’

ইফতার মাহফিলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আসম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর অব. এম এ মান্নান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমান ও বিজেপির মহাসচিব আব্দুল মতিন সাউদ প্রমুখ।

আরো সংবাদ : সামনে নির্বাচন : ঘর গোছাতে ব্যস্ত বিএনপি

#একুশ নিউজ/এএইচ

Comments