নিজ ভূমিতে ফিরে গেলো এক রোহিঙ্গা পরিবার

প্রকাশিত: ১:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্টা: সেনাবাহিনীর হামলা-ধর্ষণ-হত্যার মুখে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি মুসলিম পরিবার মাতৃভূমিতে ফিরেছে বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

ঢাকা ও নেপিদোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার মধ্যে প্রথমবারের মতো পরিবারটি রাখাইন রাজ্যে ফিরেছে বলে বার্তা সংস্থা থমসন রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে মিয়ানমার রোহিঙ্গা পরিবার প্রত্যাবাসনের ঘোষণা দেয়ার আগের দিন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে মিয়ানমারের অবস্থা রোহিঙ্গাদের ‘নিরাপদ, সসম্মান ও টেকসই’ প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয়।

সংস্থাটি বলেছে, “মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের আগে বাংলাদেশে থাকা শরণার্থীদের তাদের আইনি অধিকার ও নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা পাওয়া সহ রাখাইনে নিরাপত্তা ও অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়া আবশ্যক।”

গত জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এতে বলা হয়, দুই বছর ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরবে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় রোহিঙ্গাদের জন্য সাময়িক আবাসন তৈরি করেছে। সেখানে দুটি অভ্যর্থনা ক্যাম্পও করা হয়েছে।

গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রতিদিন নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে ভিড় করছে রোহিঙ্গা সদস্যরা। এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি’ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সরকারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে সেখানে গিয়ে অভিবাসী হয়েছেন। তাঁরা মূলত ‘বাঙালি’।

বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এরই মধ্যে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পে বসবাস করছে। এটি এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি, যাদের ওপর পাচারকারীদের লোলুপদৃষ্টির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে এরই মধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা।

গতকাল শনিবার মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পাঁচ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা মুসলিম পরিবার আজ সকালে রাখাইনয়ের তাংপিওলেতেয়া অভ্যর্থনা ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছে।’


রাখাইনে পুড়ে যাওয়া মুসলমানদের ঘর-বাড়ি

ইমিগ্রেশন ও স্বাস্থ্য কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাদের যাবতীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা সম্পন্ন করেন। পরে সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ে তাদের চাল, মশারি, লুঙ্গি, টি-শার্ট ও রান্নার সরঞ্জাম দেয় বলে সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সব ধরনের নিয়ম অনুসরণ করে পরিচয় শনাক্তকরণের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলছে, এই এনভিসির নিরিখেই আগামী দিনে নাগরিকত্ব সনদ দেওয়া হবে। যদিও অধিকাংশ রোহিঙ্গাই এ ধরনের বিষয়ের ব্যাপারে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এর মাধ্যমে আসলে তাঁদের আজীবন নতুন অভিবাসী হিসেবেই থাকতে হবে।

এএফপি বলছে, শনিবার দিন শেষে মিয়ানমার সরকার একটি বিবৃতি পোস্ট করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ওইদিনই প্রথম একটি রোহিঙ্গা পরিবার ফিরে গেছে দেশে। মিয়ানমার সরকারের ইনফরমেশন কমিটি এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘শনিবার সকালে রাখাইনের তাউংপাওলেটুই শহরে প্রত্যাবর্তন ক্যাম্পে ফিরে গেছেন পাঁচ সদস্যের ওই পরিবার’।

ওই পোস্টে এই পরিবারটিকে মুসলিম হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে তাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে উল্লেখ করা হয় নি। কারণ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শব্দটি অনুচ্চারিত। নিষিদ্ধ। তাই কথিত ফেরত যাওয়া পরিবারটিকে রোহিঙ্গা হিসেবে না দেখিয়ে তাদেরকে মুসলিম হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

ওই পোস্টের সঙ্গে একটি ছবিও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তাতে দেখা যায় ওই পরিবারটিতে রয়েছেন একজন পুরুষ। দু’জন নারী। একজন তরুণী। একটি বালক। তারা আইডি এবং হেলথ চেকিং কার্ড সংগ্রহ করছেন। সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই পরিবারটিকে মংডু শহরে তাদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে অস্থায়ী আবাসনে পাঠানো হয়েছে। তবে ভবিষ্যত প্রত্যাবর্তন কবে শুরু হবে, কতদিন লাগবে সে বিষয়ে আর কোনো তথ্য বা পূর্বাভাস দেয়া হয় নি।

/এস আর

Comments