ধর্ষণ বিরোধী কার্টুনে রাম -সীতা: হুমকিতে শিল্পী

প্রকাশিত: ৬:১৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৯, ২০১৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের পক্ষ নেয়া কট্টরপন্থী হিন্দু সমর্থকদের বিদ্রুপ করে হিন্দু দেবতা রাম ও তাঁর স্ত্রী সীতার মধ্যকার আলোচনা কার্টুনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন কার্টুনিস্ট স্বাতী ভাদলামুদি। কার্টুনে সীতা রামের কাছে এই বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন যে তাঁকে রামের সমর্থকদের বদলে রাক্ষসদের রাজা রাবণ অপহরণ করায় তিনি বেশি স্বস্তি পেয়েছেন। এই কার্টুনটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে হিন্দু কট্টরপন্থীদের নানা ধরণের হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে মিজ. ভালদামুদিকে।

তবে মিজ. ভাদলামুদি বলেছেন যে এসব হুমকি তাঁকে আরো ‘শক্তিশালী’ করেছে। তাঁর কার্টুনটি সামাজিক মাধ্যমে আলোচিত হলেও কার্টুনে হিন্দু পুরাণ রামায়নের চরিত্র ব্যবহার করায় তা ব্যাপক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে।

বিবিসি কে মিজ. ভাদলামুদি বলেন ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন তৈরী করা তাঁর শখ। তিনি বলেন তাঁর কার্টুনটি সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় আসা দুটি ঘৃণ্য ধর্ষণের ঘটনার প্রতি নিন্দার বহি:প্রকাশ।

ভারত অধ্যূষিত কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আট বছর বয়সী এক শিশুকে গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পর অভিযুক্ত হিন্দু ব্যক্তিদের সমর্থনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি’র দুই মন্ত্রী মিছিলে যোগদান করলে বিক্ষোভ প্রকাশ করে মানুষ। আরেকটি ঘটনায় ১৬ বছর বয়সী একজন শিশু বিজেপি’র একজন আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ঐ ব্যক্তির বাসার বাইরে আত্মহননের চেষ্টা চালায়।


মিজ. ভাদলামুদি বলেছেন যে এসব হুমকি তাঁকে আরো ‘শক্তিশালী’ করেছে।

বিবিসি তেলেগু’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে মিজ.ভাদলামুদি বলেন দু’টি ঘটনাই “ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি’র সাথে সম্পৃক্ত – একটি ক্ষেত্রে নেতা অপরাধ সংঘটন করেছেন, আরেকটিতে নেতারা অপরাধীদের সমর্থন করেছেন।” মিজ. ভাদলামুদি বলেন ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্তদের যারা সমর্থন করেছেন তাদের অধিকাংশই নিজেদের দেবতা রামের ‘ভক্ত’ বা ‘উপাসক’ বলে দাবী করেছেন।

কার্টুনটি প্রকাশিত হওয়ার পর অনলাইনে অসংখ্য হুমকি পেয়েছেন তিনি। তাঁকে গ্রেফতারের দাবীই জানিয়েছেন অনেকে।

কিছু হুমকিতে হিন্দু মৌলবাদের সমালোচনা করায় সম্প্রতি হত্যা হওয়া ভারতীয় সাংবাদিকের উদাহরণও টেনে আনা হয়।

মিজ. ভাদলামুদি বলেন, “সামাজিক মাধ্যমের হুমকির কারণে আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না।” তাঁর নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও চিন্তিত রয়েছেন বলে জানান তিনি।

একটি কট্টরপন্থী দল মিজ ভাদলামুদির বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার অভিযোগ আনলে একটি মামলা গ্রহণ করে পুলিশ। নারী সংগঠনগুলো আর ভারতীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের নিন্দা জানিয়েছে। তারা এটিকে “সংবাদমাধ্যমের ওপর আক্রমণ” বলে অভিহিত করেছে। গত কয়েকবছরে হিন্দু মৌলবাদের বিরোধিতা করা সাংবাদিকরা সামাজিক মাধ্যমে ভর্তসনার শিকার হয়েছেন। নারী সাংবাদিকদের অনেককেই ধর্ষণ ও আক্রমণের হুমকি দেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’ ভারতকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানের হিসেবে অনিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের গবেষণা অনুযায়ী ১৯৯২ থেকে ভারতে অন্তত ২৭ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন।

সূত্র: বিবিসি/এসআর

Comments