চলে গেল রাজিব! আর ঢাকায় ফিরবে না

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৭, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর বাংলামোটরে দুই বা‌সের প্রতি‌যো‌গিতায় ডান হাত হারানো তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেনের দাফন পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নিজ গ্রামে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালে উপস্থিত রাজীবের মামা ও চাচা। রাজিবের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই নিহতের মামা ও চাচা হাসপাতালে উপস্থিত হন। রাজীবের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্তের পর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নিজ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই রাজীবের দাফন সম্পন্ন হবে।

তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও ঢামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শামসুজ্জামান শাহীন এর আগে রোববার বলেন, ‘রাজীবের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তার হার্ট, কিডনি, ফুসফুসসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ স্বাভাবিক আছে। রাজীবের শরীর মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দেয়। কিন্তু মস্তিষ্ক সাড়া দেয়নি।’

গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে পান্থকুঞ্জ পার্কের সামনে বিআরটিসি বাসের সঙ্গে স্বজন পরিবহনের বাস টক্কর দিতে গেলে বাস দুটির মাঝখানে পড়ে ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় রাজীবের। সরকারি তিতুমীর কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের এ ছাত্রকে তাৎক্ষণিক পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরদিন তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে সরকারের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছিলো। সেখানে রাজীবের শারীরিক অবস্থার ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। গতকাল সোমবার রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা মে‌ডি‌কেল ক‌লেজ হাসপাতা‌লে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজীব (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রাজীবের ঘটনাটি দেশের মানুষকে নাড়া দিয়ে যায়। রাস্তায় যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ছেলেবেলায় বাবা-মা হারানো রাজীবের বেঁচে থাকার লড়াই, স্বপ্ন—সবকিছুর ইতি ঘটেছে তাঁর চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। লেখাপড়া শিখে যখন দুই ভাইকে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছিলেন বাবা-মা হারানো রাজীব, তখন দুই বাসের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এমন সংগ্রামী তরুণ প্রাণকে থামিয়ে দিল। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় রাজীব মা আকলিমা খানমকে হারান। বাবা সেই শোকে অপ্রকৃতিস্থ হয়ে পড়েন। ছিলেন নিরুদ্দেশ। ২০১১ সালে চট্টগ্রামে এক আত্মীয়ের বাসায় তিনি মারা যান। এর আগের তিন বছর তিনি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। রাজীব ও তাঁর ছোট দুই ভাই পটুয়াখালীর বাউফলে নানার বাড়িতে ছিলেন। পরে ঢাকায় এসে পোস্ট অফিস হাইস্কুলে ভর্তি হন। খালার বাড়ি থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর রাজীব যাত্রাবাড়ীর মেসে গিয়ে ওঠেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে কম্পিউটার কম্পোজ, গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ শিখছিলেন। ছাত্র পড়াতেন। দম ফেলার ফুরসত পাননি। লক্ষ্য ছিল একটাই, নিজের পায়ে দাঁড়ানো, ভাই দুটির দায়িত্ব নেওয়া। রাজীবের সব স্বপ্ন গতকাল রাতে শেষ হয়ে যায়। প্রায় সাত দিন অচেতন অবস্থায় পড়ে থেকে একেবারে চলে গেলেন রাজীব।

এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজীবের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে ৩০৪–এর খ ধারায় তদন্ত হবে। পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, তদন্তে ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে

গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাজীব হোসেন মারা যান। রাজীবের খালা জাহানারা বেগম, আরো দুজন স্বজন ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) বাচ্চু মিয়া রাতেই বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

/এসআর

Comments