ক্রেডিট কার্ডে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বাড়ছে !

প্রকাশিত: ২:৪১ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ২, ২০১৮

ডেস্ক রিপোর্ট : সুদের হার নিয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা না থাকার কারণে অধিকাংশ ব্যবহারকারী ক্রেডিট কার্ড নিয়ে বেশ ভোগান্তি ও আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। স্রেফ পাঁচ পয়সার জন্য ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে ব্যাংক আইনে। অথচ এসব আইন সম্পর্কে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের মোটেও কিছু বলে না। পাশাপাশি এটাও বলে না, ক্রেডিট কার্ডে সুদের হিসাব মাসিক ভিত্তিতে হয় নাকি বার্ষিক ভিত্তিতে হয়।

অথচ সাধারণ ভাবে এটাই জোরেশোরে বোঝানো হয়, কেনাকাটা কিংবা বিল পরিশোধ করতে ক্রেডিট কার্ডের জুড়ি নেই। নগদ টাকার বিকল্প হিসেবে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধাও অনেক। নানান সুবিধা বিবেচনা করে গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ড নেন। তারপরও নানা কারণে সুবিধার চেয়ে অসুবিধা বেশি বলেই এখন ব্যবহারকারীরা মনে করছেন।

কারণ বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, অনেকের কাছে ক্রেডিট কার্ড এখন আতঙ্কের বিষয়। একসময় কাবুলিওয়ালাদের ব্যবসার মতো হালের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবসা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। চটকদার বিজ্ঞাপনে গ্রাহকরা বছরের পর বছর প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রায় প্রত্যেক ক্রেডিট কার্ডধারীরই এ বিষয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা না মেনে ব্যাংকগুলো তাদের ইচ্ছা মাফিক সুদ ও অন্যান্য ফি আদায় করায় এমন ঘটছে।

ব্যাংক ও ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুদের হারই ক্রেডিট কার্ডের একমাত্র ব্যয় নয়। সময়মতো মাসিক মূল্য পরিশোধ না করলে জরিমানা গুনতে হয়। এ জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার বেশ বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সময়জ্ঞান না থাকলে। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে নগদ টাকা তুললে গুনতে হয় বাড়তি ফি।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা জানিয়েছেন, ব্যাংকের মার্কেটিং প্রতিনিধিদের অনুরোধ ও তাদের মিষ্টি প্রচারণায় ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক হবার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ব্যাংকগুলোর মার্কেটিং পলিসির কাছে হেরে গিয়ে কার্ড নিয়েছেন অনেক গ্রাহক। ব্যাংক তাদের সঙ্গে ‘শর্ত প্রযোজ্য’ দিয়ে ভয়াবহ প্রতারণা করছে।

ব্যাংকগুলো ১৬ থেকে ৩৬ শতাংশ হারে সুদ নেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে নিচ্ছে ৩০ থেকে ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আর তাদের এ প্রতারণা থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যাংকার, জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা কেউই বাদ পড়ছেন না। এদের মধ্যে যারা একটু সচেতন, তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছেন। বাকিরা এ ক্রেডিট কার্ডের ফাঁদে অর্থ দিতে বাধ্য হচ্ছেন।

একজন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, একবার ০৫ পয়সা বিল কম দেয়ার জন্য ৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হয়েছিল। কারণ ওই ব্যাংকের জরিমানা আদায়ের ন্যূনতম পরিমাণ ছিল ৫০০ টাকা।

ক্রেডিট কার্ডে ব্যয় করা টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে সাধারণত থার্ড পার্টি নিয়োগ করে থাকে ব্যাংকগুলো। ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে যে সুদ ঘোষণা করা হয় বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়। কারণ, ব্যাংকাররা সব সময় বলে থাকেন যে ক্রেডিট কার্ডে আরোপিত সুদের হার হলো আড়াই থেকে তিন শতাংশ। কিন্তু এই সুদের হার যে মাসিক, এটা বলা হয় না। সাধারণত, সকল সুদের হার বার্ষিক হিসাব করা হলেও ক্রেডিট কার্ডের সুদের হার মাসিক হিসাব করে অনেক ব্যাংক। এতে প্রতি মাসেই এ ঋণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে।

এছাড়া সার্ভিস চার্জ, নবায়ন ফি, পেনাল্টি চার্জ তো রয়েছেই। পেনাল্টির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই ঘটে গ্রাহকের অজ্ঞতার কারণে। আর ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ইচ্ছা করেই গ্রাহককে এসব বিষয়ে সচেতন করা হয় না।

#AH

Comments