কোটা সংস্কারের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে, বিভিন্ন স্থানে পুলিশি বাধা

প্রকাশিত: ১১:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৮, ২০১৮

একুশ ডেস্ক: চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। এতে এক যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয় শাহবাগে। সারাদেশ ব্যাপী চাকরিপ্রার্থী আর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে কমপক্ষে আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী।

সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেওয়া আন্দোলনকারীদের ওপর একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছে পুলিশ। রবিবার রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশকে মুহুর্মুহু কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে দেখা যায়—সঙ্গে ছিল পুলিশের জলকামান ও লাঠিপেটা। জবাবে আন্দোলনকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা গেছে।

এর আগে রবিবার রাত পৌনে আটটার দিকে পুলিশ বিক্ষোভাকারীদের লাঠিপেটা করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা কিছুটা পিছুহটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ এলাকায় অবস্থান নেন। অন্যদিকে পুলিশ চারুকলা অনুষদের সামনে অবস্থান নেয়।

পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত পুরো এলাকাটি পুলিশের নিক্ষেপ করা কাঁদানে গ্যাসে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কাঁদানে গ্যাস থেকে রক্ষা পেতে আন্দোলনকারীরা সড়কের ওপর আগুন জ্বালান। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। কয়েকজন আন্দোলনকারী ও পথচারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রবিবার দুপুর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।

কেন্দ্রীয়ভাবে রবিবার বেলা দুইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে থেকে এই পদযাত্রা শুরু হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে রাজু স্মৃতি ভাস্কর্য হয়ে নীলক্ষেত ও কাঁটাবন ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান নেন তারা।

কোটা সংস্কার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী। তাদের দাবি, বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংস্কার করে কমাতে হবে। চাকরিতে কোটা সব মিলিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছিলেন। শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা শাহবাগের মূল রাস্তায় অবস্থান নেওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সে সময় আন্দোলনকারীরা বলছিলেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট আলোচনা শুরু না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন এবং শাহবাগ মোড়ে অবস্থান অব্যাহত রাখবেন।

বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৫ শতাংশ বিভিন্ন ধরনের অগ্রাধিকার কোটা রয়েছে। আর বাকি ৪৫ শতাংশ নিয়োগ দেওয়া হয় মেধা কোটায়। এ জন্য এই কোটাব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার নন্দনপুর এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

অবরোধের কারণে মহাসড়কের উভয় দিকে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, কোটার কারণে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমরা তাদের মহাসড়ক ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করছি।’

ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ

কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনাসহ পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ রবিবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় গেটের দুই পাশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলন’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক মাসুদ মোন্নাফ বলেন, ‘আমরা কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি পালন করছি। আমরা চাই, সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির কথা বিবেচনা করে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত জানাবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কিছুদিন ধরে ই-আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। আমরা পড়াশোনা বাদ দিয়ে এভাবে প্রতিদিন আন্দোলনে নামতে চাই না। আমরা আমাদের দাবির বাস্তবায়ন চাই।’

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো হলো: কোটার শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, চাকরির পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একবারের বেশি নয়, কোটায় বিশেষ নিয়োগ বন্ধ এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা অভিন্ন করতে হবে।

এর আগে রবিবার বেলা দুইটায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেন। পদযাত্রায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পদযাত্রাটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট দিয়ে বেরিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে যায়। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটের সামনে আসে। সেখানে তাঁরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন।

শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর লুৎফর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ

কোটা সংস্কারের দাবিতে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ময়মনসিংহে রবিবার বেলা তিনটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা। কমপক্ষে তিন ঘণ্টা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখা হয়। তবে এ সময় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শিকারিকান্দা মোড়ে শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। পরে প্রায় এক ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় তাঁরা ‘সরকারি আমলার’ কুশপুতুল দাহ করেন।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করলেও তাঁরা সরে যাননি।

/এসআর

Comments