কঠোর নিরাপত্তায় শুরু হলো এইচএসসি পরীক্ষা

প্রকাশিত: ৪:৩৮ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২, ২০১৮

একুশ নিউজ ডেস্ক : পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আজ সোমবার থেকে উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলো। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত।

আজ পরীক্ষার প্রথম দিনে (২ এপ্রিল, সোমবার) সাধারণ আট বোর্ডের অধীনে এইচএসসিতে বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্র, এরপর থেকে পর্যায়ক্রমে সহজ বাংলা প্রথম পত্র, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি প্রথম পত্র এবং ডিআইবিএস-এ বাংলা (আবশ্যিক) প্রথম পত্রের পরীক্ষা শুরু হলো। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে আলিমে কুরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ব্যবসায় ব্যবস্থাপনায় সকালে বাংলা-২ (নতুন সিলেবাস) ও বাংলা-২ (পুরাতন সিলেবাস) এবং বিকালে বাংলা-১ (সৃজনশীল নতুন সিলেবাস) ও বাংলা-১ (সৃজনশীল পুরাতন সিলেবাস) পরীক্ষা শুরু হলো।

এবার সারা দেশে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৩ লাখ ১১ হাজার ৪৫৭ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এর মধ্যে সাধারণ আট বোর্ডে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১০ লাখ ৯২ হাজার ৬০৭ জন। তার মধ্যে ছেলে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৬১২ এবং মেয়ে ৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৫ জন। অন্যদিকে, মাদরাসা বোর্ডের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ১২৭ জন। যার মধ্যে মেয়ে ৪৪ হাজার ১৩৫, ছেলে ৫৫ হাজার ৯৯২ জন। এছাড়াও কারিগরি শিক্ষায় মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৫৪। এবার মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৩০ জন ছাত্র এবং ৬ লাখ ১৮ হাজার ৭২৭ জন ছাত্রী। বিদেশের সাতটি কেন্দ্রে ২৯৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন, এরমধ্যে ১৫৯ জন ছাত্র এবং ১৪০ জন ছাত্রী।

২০১৭ সালে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ১১,৮৩,৬৮৬ জন এবং ২০১৮ সালে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১৩,১১,৪৫৭ জন। ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে মোট পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১,২৭,৭৭১ জন, বৃদ্ধির হার ১০.৭৯%। মোট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৭৯টি এবং মোট কেন্দ্র বেড়েছে ৪৪টি।

শিক্ষামন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সার্বক্ষণিকভাবে সারাদেশের এইচএসসি ও সমমানের সকল পরীক্ষা তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষা শুরুর ৩০ (ত্রিশ) মিনিট পূর্বে পরীক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে আসন গ্রহণ করতে হবে। পরীক্ষা শুরুর ২৫ (পঁচিশ) মিনিট পূর্বে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বারে সেট কোড ব্যবহারের নির্দেশনার এসএমএস যাওয়ার পর প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলবেন। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ব্যতিত অন্য কেহ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন।

সূত্র জানায়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা শ্রুতিলেখক নিয়ে পরীক্ষা দিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন। আর অটিস্টিকসহ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীরা পাবেন অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়। এ ধরনের শিক্ষার্থীরা অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন বলে জানা গেছে।

এ ছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় এবং পরীক্ষার কক্ষে তার অভিভাবক/শিক্ষক/সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এবারও শুরুতে বহুনির্বাচনী (এমসিকিউ) এবং পরে রচনামূলক অংশের পরীক্ষা হবে। ৩০ নম্বরের বহুনির্বাচনী পরীক্ষার সময় ৩০ মিনিট এবং ৭০ নম্বরের সৃজনশীল পরীক্ষার সময় আড়াই ঘণ্টা।

উচ্চ মাধ্যমিকের এই পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে পরীক্ষার আগের দিন জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। সোমবার সকাল ৯টায় শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ কেন্দ্রে এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছবি তোলা যায় না এমন মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষা সংশিষ্টরা বাদে অন্যদের ঢোকার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

আজ সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাজধানীর বেইলি রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন। অন্যদিকে, একই সময়ে পুরান ঢাকার বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসা কেন্দ্র পরিদর্শন করবেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় দেশের সব মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম ডিপার্টমেন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের সব মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এমএফএস (মোবাইল ব্যাংকিং) হিসাবের মাধ্যমে সম্পাদিত লেনদেন কঠোর নজরদারির আওতায় রাখতে হবে। সব এমএফএস প্রোভাইডার স্ব-স্ব ডিস্ট্রিবিউটর অথবা সুপার এজেন্ট, এজেন্ট ও গ্রাহকদের এই নির্দেশনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন। এছাড়া এজেন্টদেরও যথাযথ নজরদারির আওতায় রাখবেন। যে সব মোবাইল হিসাবে অস্বাভাবিক লেনদেন দেখা যাবে, সে সব লেনদেনকারীর তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পাঠাতে হবে।

/এসআর

Comments