এপ্রিলে উৎক্ষেপণ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’

প্রকাশিত: ৫:৫৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০১৮

প্রযুক্তি ডেস্ক :  এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে স্বপ্নের মহাকাশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। মাসের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে যেকোনও দিন এটি ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালের স্পেস এক্স থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। উৎক্ষেপণের দিন দেশের সবকটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আতশবাজি পোড়ানো চলবে। জমকালো আয়োজন হবে ফ্লোরিডায়ও।

স্থানীয় সময় শনিবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল অফিসে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের নির্দিষ্ট তারিখ আগে থেকে বলা সম্ভব হয় না। তবে আমরা কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এতটুকু বলতে পারি, এপ্রিলের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ৭ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিলের মধ্যে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে।’

শাহজাহান মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ভি স্যাট এবং এ জাতীয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিদেশি স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। এখন থেকে তারা বাংলাদেশের স্যাটেলাইট ব্যবহার করেই তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবেন।

তিনি জানান, দেশের টিভি চ্যানেলগুলো স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ বছরে ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় করে। সে টাকা এখন থেকে দেশেই থেকে যাবে। ইন্টারনেট বা ভি স্যাট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকেও বিদেশে টাকা খরচ করতে হবে না।

তিনি বলেন, ‘টিভি চ্যানেলগুলোকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি দিতে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ও বায়াস মিডিয়াকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।’

এতে করে এই দুটি প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেলগুলোর ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘টিভি চ্যানেল নিয়ন্ত্রণের সুযোগ কারো নেই। আগামী এক মাসের মধ্যে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হবে।’

শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হচ্ছে ২ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। আর ঋণ হিসেবে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি দিচ্ছে বাকি ১ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা। তিনি বলেন, আমরা ধারণা করছি, এ প্রকল্পে যে টাকা খরচ হয়েছে দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ৭ বছরে সে টাকা আমরা তুলতে পারবো।’

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান, বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ, বিটিআরসির সচিব মোহাম্মদ সারোয়ার আলম, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান স্পেস পার্টনারশীপ ইন্টারন্যাশনালের প্রধান শফিক আহমেদ চৌধুরী ছাড়াও দূতাবাস, জাতিসংঘ মিশন ও কনস্যুলেটের কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নিয়ে নির্মিত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

এসময় জানানো হয়, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের উদ্বোধন করবেন আর ওইদিন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় ফ্লোরিডায় জমকালো আয়োজনে উপস্থিত থাকবেন।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের ৫৭তম স্যাটেলাইট সদস্য দেশের তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১-এর মূল অবকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে।

ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস নামের একটি মহাকাশ সংস্থা অবকাঠামো তৈরির এই কাজটি করেছে। স্যাটেলাইটটি এখনও ফ্রান্সে রাখা আছে, তারিখ নির্ধারিত হলেই এটি বিশেষ একটি বিমানে করে তা ফ্লোরিডা নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে স্যাটেলাইটটি মহাকাশে পাঠানো হবে।

জানাগেছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট তৈরির পুরো কর্মযজ্ঞটি চলছে বিটিআরসির তত্ত্বাবধানে। তিনটি ধাপে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো স্যাটেলাইটের মূল কাঠামো তৈরি, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা) তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

#এএইচ

Comments