আনন্দ বাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনন্দ

প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৪, ২০১৮

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি:ওই স্টুডেন্ট, সবার পরে গাড়িতে উঠবা, সিট খালি থাকলে বসবা, কেউ আসলে দাঁড়িয়ে তাকে বসতে দিবা। আরও কত কি নিমেশেই বলে ফেললো আনন্দ বাসের হেলপার। এতকিছু শুনার পরও বাসে উঠে একটা সিটে বসলাম। কারন আমি স্টুডেন্ট, অধিক মূল্য দিয়ে, সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা অন্য পরিবহনে যাওয়া সম্ভব নয়।

যাক কিছুক্ষন পর কন্টাক্টর আসলো, বললো ভাড়া দেওয়ার জন্য। দিলাম হাফ ভাড়া। যেই দিলাম, তখনি বলে উঠলো, কিশের হাফ ভাড়া দিবি? দেও পুরো (সম্পুর্ন) ভাড়া দাও, না হয় গাড়ি থেকে নেমে যাও। তোদের পড়ালেখা দিয়ে আমগো কি হইবো? কোন সমস্যায় পড়ে তোদের কাছে গেলেতো দুই টাকাও কম রাখবি না।

এই প্রতিবেদকের কাছে এমনটি মন্তব্য করলেন, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ নোমান ছিদ্দীকী ও আরিফ হোসেন

তবে বাসের হেলপার আর কন্টাক্টরদের এমন আচরণ শুধু জুনাইদের সাথেই নয়। তারা জেলার সর্বত্রই শিক্ষার্থীদের সাথে এমন আচরণ করে। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের থেকে হাফ ভাড়া নেওয়ার মৌখিক নির্দেশ থাকলেও তা মানছেন না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তবে ছাত্র না হয়ে যদি ছাত্রী হয়, তাহলেতো কোন কথায় নেই, হয়রানির মাত্রা বহুগুনে বেড়ে যায়। তবে এ নিয়ে প্রায় সময় শিক্ষার্থী ও বাসের হেলপার এবং কন্টাক্টরদের সাথে বাগবিতন্ডা হয়। মাঝে মাঝে সেই বাগবিতন্ডা মারামারিতে রুপ নেয়।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের বিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্রী সানজিদা শিমু বলেন, আমাদের দেখলেই বাস দাঁড়ায় না, চালিয়ে চলে যায়। অনেক সময যদি উঠতে পারি, তাহলে সিটে বসতেও পারি না। আর হাফ ভাড়া দেওয়া মাত্রই “গাড়ি কি তোদের দুলা ভাইয়ের, কোন কলেজে যাও , প্রেমের না শপিং কলেজে” ইত্যাদি খারাপ ভাষা ব্যবহার করে। এছাড়াও খারাপ দৃষ্টি ও ভঙ্গি প্রদর্শন করে। মানসম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাইনা।

রায়পুর সরকারি কলেজের কয়েকজন ছাত্র বলেন, আইডি কার্ড দেখিয়ে হাফ ভাড়া দিলেও লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। জোর পূর্বক সম্পূর্ন ভাড়া আদায় করে।
এছাড়াও বিকাল ও জাতীয় কোন দিবসের দিন হাফ ভাড়া দিলে আরো বেশি হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।

কয়েকজন একসাথে থাকলে যায়গা নেই বলে বাসে উঠতে দেয় না। উঠার সুযোগ পেলেও পুরো (সম্পূর্ন) ভাড়া আদায় করতে খুবই খারাফ ভাষা ব্যবহার করে। এতসব কিছু নিরবেই সইতে হয় মেয়ে বলে। এমনটি জানালেন লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর ছাত্রী রুমা আক্তার।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অন্য এক শিক্ষার্থী ফাহিমা সুলতানা সুপ্তি বলেন, সিট খালি থাকার পরও নেই বলে আমাদের বাসে উঠতে দেয় না। যদিও উঠার সুযোগ পায়, তবে বসতে পারিনা। হাফ ভাড়া দিলেতো অপমানিত হতে হয়। হাফ ভাড়া দেওয়ার নিয়ম থাকার পরেও কেন আমাদের হয়রানি ও অপমানিত হতে হয়? সুপ্তি এমনটি প্রশ্ন রাখেন সংশ্লিষ্টদের কাছে।

আনন্দ বাসের কন্টাক্টর স্বাধীন হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়। তবে মাঝে মাঝে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশী হলে হাফ ভাড়া নিতে ও বাসে উঠাতে চাই না। কেউ কখনোই তাদের সাথে খারাপ আচরণও করে না।

হাফ ভাড়ার বিষয়ে ১২-১৬২১ আনন্দ গাড়ির চালক বাবুল হোসেন বলেন, সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪ টা ও সন্ধার পর কোন হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। অন্য সময় নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ সময় স্কুল কলেজে না গিয়েই হাফ ভাড়া দিয়ে থাকে।

তবে শিক্ষার্থী হয়রানির বিষয়ে ছাত্র নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। অথচ তারাই আজ বঞ্চনার শিকার। শিক্ষার্থী বলে উঠানো হচ্ছে না বাসে। উঠালেও শিক্ষার্থী বলে হাফ ভাড়া দিতে চাইলে ক্ষেপে যান কন্টাক্টর। করেন খারাপ ব্যবহার। খুব দ্রুতই এ সমস্যা সমাধানে তারাও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। অন্যথায় ছাত্রদের অধিকার ছাত্ররাই যে কোন ভাবেই আদায় করে নিবে।

জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়ন নেতা জাকির হোসেন জানান, এ বিষয়ে কোন নীতিমালা নেই, মৌখিক নির্দেশ রয়েছে মাত্র। তারপরেও শিক্ষার্থীদের থেকে হাফ নেওয়া হয়। তবে হাফ ভাড় নেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি তিনিও জানেন না বলে এড়িয়ে যান।

জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি নুরনবী চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের থেকে হাফ (অর্ধেক) ভাড়া নেওয়ার নির্দেশ রয়েছে মালিক সমিতির পক্ষ থেকে। তবে হয়রানির বিষয়টি তার জানা নেয়।

লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মাইন উদ্দিন পাঠান বলেন, শিক্ষিত জাতি গঠনে ও দেশকে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা করা সকলের উচিত। হাফ ভাড়া নিয়ে চলমান সমস্যাটি মৌখিক নয়, সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে বিষয়টি গেজেট আকারে প্রকাশ করলেই সমাধান হবে।
এছাড়াও তিনি, শিক্ষার্থীদের থেকে হাফ নেওয়ার জন্য বাস মালিক ও শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানান।

জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল বলেন, হাফ ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী হয়রানির বিষয়টি জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রাহন করা হবে

Comments