গাজীপুরে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন

প্রকাশিত: ১০:৫১ অপরাহ্ণ, মে ১০, ২০১৮

স্টাফ রিপোর্টার: আজ (১০ মে) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২ টার পর আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে আনুষ্ঠানিক উৎক্ষেপণ শুরু হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। উৎক্ষেপণের পর এটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে প্রস্তুত করা হয়েছে প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশন।

বাংলাদেশের গাজীপুরে স্থাপন করা হয়েছে এই প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনটি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তেলীপাড়ায় টেলিযোগাযোগ স্টাফ কলেজ  এলাকায় এটির অবস্থান।

স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের দৃশ্য দেখার জন্য গাজীপুরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্ততি। টিভিতে সরাসরি প্রচারিত এ বিরল দৃশ্যটি দেখতে অনেকে বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দা টানিয়েছেন। ইতিহাসের সাক্ষী হতে অনেকে রাত জেগে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি দেখবেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর জানান, উৎক্ষেপণের পর গাজীপুরে স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে। এ ধরনের আরেকটি গ্রাউন্ড স্টেশন চট্টগ্রামের বেতবুনিয়ায় স্থাপন করা হলেও সেটি হচ্ছে গাজীপুরে স্থাপন করা গ্রাউন্ড স্টেশনের বিকল্প। মূল নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র হবে গাজীপুরের গ্রাউন্ড স্টেশন।

শিগগিরই গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রাইমারি গ্রাউন্ড স্টেশনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। উৎক্ষেপণের দৃশ্যটি সরাসরি প্রদর্শন ও ব্যাপক প্রচারণা করতে এরই মধ্যে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্যাবল অপারেটরদের নির্দেশ প্রদান করেছেন বলেও তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানায়, স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ২০ দিন লাগবে। স্যাটেলাইটটি সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে।

এ উৎক্ষেপণ দেখতে হলে আগ্রহীদের উৎক্ষেপণ স্থানের তিন থেকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থান নিতে হবে। সাত মিনিটের কম সময় দেখা যাবে, তার পরপরই উচ্চগতির রকেট চলে যাবে দৃষ্টি সীমার বাইরে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর রকেটের স্টেজ-১ খুলে নিচের দিকে নামবে, এরপর চালু হবে স্টেজ-২। পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্টেজ-১  পৃথিবীতে এলেও স্টেজ-২ একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত স্যাটেলাইটকে নিয়ে গিয়ে মহাকাশেই থেকে যাবে।

দুটি ধাপে এই উৎক্ষেপণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি হলো ‘লঞ্চ অ্যান্ড আরলি অরবিট ফেইজ’ (এলইওপি) এবং দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে ‘স্যাটেলাইট ইন অরবিট’। প্রথম ধাপে ১০ দিন এবং পরের ধাপে ২০ দিন লাগবে। উৎক্ষেপণ স্থান থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে যাবে এই স্যাটেলাইট। ৩৫ হাজার ৭০০ কিলোমিটার যাওয়ার পর রকেটের স্টেজ-২ খুলে যাবে। স্যাটেলাইট উন্মুক্ত হওয়ার পরপর এর নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি এবং কোরিয়ার তিনটি গ্রাউন্ড স্টেশনে চলে যাবে।

এই তিন স্টেশন থেকে স্যাটেলাইটটিকে নিয়ন্ত্রণ করে এর নিজস্ব কক্ষপথে (১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্পট) স্থাপন করা হবে।

আর্থ স্টেশন থেকে ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে স্যাটেলাইটটির কক্ষপথে যেতে সময় লাগবে ৮ থেকে ১১ দিন। আর পুরোপুরি কাজের জন্য প্রস্তুত হতে সময় লাগবে ৩ মাস।

মহাকাশে সফলভাবে স্থাপিত হওয়ার প্রথম ৩ বছর থ্যালাস অ্যালেনিয়ার সহায়তায় স্যাটেলাইটটির রক্ষণাবেক্ষণ করবে বাংলাদেশ। পরবর্তীতে পুরোপুরি বাংলাদেশী প্রকৌশলীদের হাতে গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়া আর্থ স্টেশন থেকে এটি নিয়ন্ত্রিত হবে।

/এমএম

Comments